অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম, ফি, ডাউনলোড তথ্য। জাতীয় পরিচয় পত্র হোক অথবা অন্য যে কোনো কিছু, তথ্য ভুল থাকাটা খুবই কমন একটি বিষয়। কখনো এই ভুলটি হয় আপনার নামের সঙ্গে অথবা কখনো আপনার পিতা-মাতার নামের সঙ্গে কখনো আবার ঠিকানাতেই করে ফেলেন কর্তৃপক্ষ। ভুল তো ভুলই। তাকে ভুলের মতই থাকতে দিন। চলুন এবার সমাধান খুঁজে নেওয়া যাক। যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডে কোন তথ্য ভুল আসে তাহলে সেটা কিভাবে সমাধান করবেন?
আমরা আজকে আপনাদেরকে দেখাতে চলেছি অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করবেন যেভাবে
যেহেতু আমাদের পরিচয় পত্র স্মার্ট, তাই এর সমাধানটাও স্মার্ট। এখন আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে আপনার আইডি কার্ডের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে একটা লম্বা প্রসেস ফলো করতে হবে। পুরো প্রসেস আপনাকে ডিটেইল বলে দিচ্ছি।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
প্রথমে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য নির্ধারিত সরকারি ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটের লিংক
এই ওয়েব সাইটে যাওয়ার পর আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদি আপনি আগে কখনও রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন এখানে তাহলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। আমি ধরে নিচ্ছি আপনার পূর্বের কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। তাই “রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে চাই” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যাবেন। সেখানে “রেজিস্ট্রেশন করুন” নামে একটি অপশন পাবেন। সেই অপশনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ফরম নম্বর প্রদান করতে হবে। জন্ম তারিখ দিয়ে নিচে থাকা কোডটি তার নিচে ফাঁকা ঘরে লিখে সাবমিট করতে হবে।
এরপর নতুন একটি পেজে আপনার ঠিকানা দেওয়ার জন্য অপশন আসবে। সেখানে আপনি আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করে “পরবর্তী” বাটনটিতে ক্লিক করবেন। এই বাটনে ক্লিক করার পর আপনার মোবাইল নম্বরটি ভেরিফাই করা হবে। এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে থাকা মোবাইল নম্বরটি আগে থেকেই এড করা থাকবে। তাই আপনি যদি মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নাম্বার ভেরিফাই করতে চান তাহলে “মোবাইল পরিবর্তন” অপশনটিতে ক্লিক করে নাম্বার পরিবর্তন করুন। তারপর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি কোড আসবে সেই কোডটি ওয়েবসাইটে লিখে ভেরিফাই করতে হবে।
ফেস রিকগনাইজেশন
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে এখন শেষ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ধাপ টি বাকি রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ফেস রিকগনাইজেশন।এটা করতে আপনার নিজের চেহারা ভেরিফাই করতে হবে। এজন্য আপনাকে নতুন আরেকটি সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে আপনার মোবাইলে। সফটওয়্যারটির জন্য গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে এনআইডি ওয়ালেট (NID Wallet) লিখে সার্চ দিন।
সেখানে যদি না পান, তাহলে আগের ওয়েবসাইটের পেজ থেকেই “গুগল প্লে” নামে কালো বাটনটিতে ক্লিক করে সরাসরি এই অ্যাপে পৌঁছে যেতে পারেন। আপনার ফেস ভেরীফাই করতে ইন্সটলকৃত এনআইডি ওয়ালেট কে আপনার ক্যামেরার অ্যাক্সিস দিন। সঙ্গে সঙ্গেই আপনার সেলফি ক্যামেরা ওপেন হবে। প্রথমে আপনার মুখের সামনের অংশ ক্যামেরা বরাবর রাখুন। সম্পূর্ণভাবে আপনার চেহারা ধারণকৃত হলে নিচে সবুজ টিক চিহ্ন আসবে। এরপর আপনার মুখটি একটু বাম দিকে বাঁকা করবেন তাহলে আপনার চেহারার সেই দিকটিও চিহ্নিত হবে। এরপর ডান দিকে ঘুরিয়ে আপনার মুখের ডান দিকের অংশ ভেরিফাই করে ফেলুন।
ফেস ভেরিফাই হয়ে গেলে আপনার একাউন্ট রেডি হয়ে যাবে। এখান আপনার অ্যাকাউন্টে গিয়েই আপনি আপনার সকল তথ্য দেখতে পারবেন এবং পরিবর্তন করতে পারবেন।
তথ্য সংশোধন প্রক্রিয়া
Voter আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধনের জন্য আপনি এইমাত্র যে একাউন্টি ক্রিয়েট করলেন তার প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করবেন। সেখানে আপনি আপনার সকল তথ্য দেখতে পাবেন। তার ডানদিকে ওপরের অংশে এডিট নামে একটা বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলেই আপনি আপনার তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন। পরিবর্তন করার অপশন পাওয়ার আগেই আপনাকে সতর্ক করে বলে দেওয়া হবে যে যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ফি দিতে হবে। এখানে “বহাল” অপশন টি ক্লিক করুন। তারপরে আপনি তথ্য পরিবর্তনের জন্য একটি অপশন পাবেন।
তথ্য সংশোধন
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য এখন আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। আপনার যে যে জায়গাতে পরিবর্তন করা প্রয়োজন সেগুলো পরিবর্তন করে নেবেন। তারপর “পরবর্তী” নামে ওপরে নীল একটি বাটন থাকবে সেখানে ক্লিক করবেন। এখন আপনি আগের তথ্য থেকে নতুন কি তথ্য সংযুক্ত হচ্ছে সেটা দেখতে পাবেন। তথ্য পরিবর্তনের ব্যাপারে একটা কথা বলে দিতে চাই। পরিবর্তনটা এমন যেন হয় যেটা খুব ছোট। যেমন নামের বানানে, জন্ম তারিখে ছোট্ট পরিবর্তনে গুলো আসতে পারে। তবে যদি পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা বা জন্মতারিখের সম্পূর্ণ রকম অযৌক্তিক পরিবর্তন হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
টাকা জমা দেওয়া
আগেই বলেছিলাম যে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন করতে সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয়। ফি প্রদান করতে আপনি আপনার বিকাশ একাউন্টে চলে যাবেন। এক্ষেত্রে অ্যাপ ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি সহজ হবে। বিকাশ অ্যাপ ওপেন করার পরে “পে-বিল” অপশনে ক্লিক করুন। তারপরে সবার নিচের দিকে সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করলেই নতুন আরো একটি অপশন আসবে। সেখান থেকে কি জন্য বিল প্রদান করতে যাচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করলেই কত টাকা প্রয়োজন হবে তা আপনাকে দেখানো হবে। আপনি বিকাশের মাধ্যমে বিল পে করে দেবেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কনফার্মেশন এসএমএস পেয়ে যাবেন। তাহলেই আপনার এনআইডি কার্ডের নম্বরে টাকা যোগ হয়ে যাবে। এবার আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে একবার রিলোড দিলেই দেখতে পাবেন আপনার টাকা জমা হয়ে গেছে।
কাগজপত্র জমা
পরবর্তী স্টেপ হচ্ছে কাগজপত্র। আপনি যে পরিবর্তনগুলো করতে চাচ্ছেন সেগুলো সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের জন্য এনআইডি কার্ড কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে কিছু প্রমাণ চাইবে। প্রমাণ হিসেবে পিতা-মাতার আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি, আপনার এসএসসি সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন সহ যেকোন কাগজপত্র আপনি আপলোড করতে পারেন। মনে রাখতে হবে না আপনার পরিবর্তনের তথ্যগুলোকে সমর্থন করবে এমন কাগজপত্রই আপলোড করতে হবে।
আর আপলোড করার সময় অবশ্যই এমন কাগজপত্র আপলোড করবেন যেগুলো স্বচ্ছ এবং যেগুলো লেখা বোঝা যাচ্ছে। ফাইল সাইজ ও বেশি বড় হওয়া চলবে না। কাগজপত্র আপলোডের কয়েকটা অপশন পাবেন এবং আলাদা আলাদাভাবে তিন-চারটি ডকুমেন্ট আপনাকে আপলোড করতে হবে।
“পরবর্তী” বাটনটি ক্লিক করলেই কি কি পরিবর্তন হচ্ছে এবং আপনি কি কি কাগজপত্র স্ক্যান কপি আপলোড করেছেন সেগুলো নিশ্চিতকরণের জন্য আপনাকে আবার দেখানো হবে। এরপর “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করলেই আপনার তথ্যগুলো সরকারি অফিসে পৌঁছে যাবে। তথ্য পরিবর্তনে আপনার অ্যাপ্লিকেশনের অবস্থা আপনি আপনার একাউন্টে দেখতে পাবেন। তবে তথ্য পরিবর্তন এর প্রমাণস্বরূপ আপনাকে একটা ফাইল ডাউনলোড করে ফটোকপি করে রাখতে হবে। সেজন্য “ডাউনলোড” অপশনে ক্লিক করলেই সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি কত?
Voter আইডি কার্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম ফ্রী চালু রয়েছে। তবে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন এর জন্য মাত্র 230 টাকা ফি প্রয়োজন হবে। এই ফি আপনারা বিকাশ অথবা যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই প্রদান করতে পারবেন। কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ফি প্রদান করতে হয় সেটা আমরা এই আর্টিকেলের ওপরের অংশে আলোচনা করেছি।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে?
Voter ID কার্ডের তথ্য সংশোধন করতে ঠিক কত সময় প্রয়োজন হবে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে যেহেতু আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটা অনলাইনে হচ্ছে তাই বলা যেতে পারে এটা খুব দ্রুতই হবে। সংশোধিত আইডি কার্ড হাতে পেতে কিছু দিন সময় লাগতে পারে। তবে সরকারি অফিসের কার্যক্রম চালু থাকলে খুব বেশি সময় না লাগারই কথা।
অনলাইন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের নিয়ম সম্পর্কে এখন আপনারা প্রায় সকল তথ্য জেনে গেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি খুব সহজ ভাষায় আপনাদেরকে পুরো প্রক্রিয়াটা বুঝিয়ে দিতে। আপনারা যদি উপকৃত হন তাহলে আমরা খুশি হবো। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।