ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও করণীয়
ডায়াবেটিস হলো শরীরে Glucose এর পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যা। এটি মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। এছাড়াও এই আর্টিকেলে আপনারা ডায়াবেটিক সম্পর্কিত আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে দেরী না করে শুরু করা যাক।
ডায়াবেটিস মাত্রা
Diabetes এর মাত্রা বলতে সচরাচর বোঝানো হয় মানুষের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কত তাকে। মূলত কারো শরীরে যদি 5.6 এর নিচে Glucose থাকে তাহলে তিনি তার শরীরে ডায়াবেটিস নামক রোগটি শনাক্ত হয়নি। আর কারো যদি 5.7- 6.7 এর মধ্যে থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন তিনি প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অর্থাৎ ধীরে ধীরে তিনি ডায়াবেটিকস এর দিকে যাচ্ছেন। তবে যদি কোন ব্যক্তির শরীরে Glucose এর পরিমাণ 6.7 বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই রোগীকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী বলা হয়। তখন তাকে ডায়াবেটিকসের নিয়মিত চিকিৎসা গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি চিকিৎসা নিতে হয় এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়। খাদ্যাভাসে কি রকম পরিবর্তন আনতে হবে সেটি আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিস এর অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। যার মধ্যে কিছু আমাদের সকলেরই জানা। আর কিছু এমন রয়েছে যেগুলো হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন ডায়াবেটিকসের লক্ষণ গুলো আরো একবার জেনে নেওয়া যাক।
- ডায়াবেটিস হলে খুব ঘন ঘন পানি পিপাসা এবং ঘন ঘন পস্রাব হবে।
- প্রচন্ড খিদা লাগবে এবং সময়মতো না খেলেই হাইপো হয়ে যাবেন।
- শরীর দুর্বল হয়ে যাবে এবং কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে।
- শরীরের চামড়া প্রাণ দেখা কারকার চুলকানি ও হতে পারে।
- চোখে ঝাপসা বা কম দেখা শুরু হবে।
- শরীরে কোনো ক্ষত সৃষ্টি সেটি ভালো অতিরিক্ত সময় নেবে।
এগুলো ডায়বেটিস এর প্রধান এবং খুবই সাধারন লক্ষণ। তবে কার যদি এর মধ্যে 2-1 টি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে ও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রক্তে গ্লুকোজের পরীক্ষা করে যদি ডায়াবেটিক আক্রান্ত হন তাহলে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে এবং খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
Diabetes একটা মানুষ এর জন্য ভয়াবহ রোগ। তবে এটি এক ধরনের সাইলেন্ট কিলার রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে অন্য রোগের মতো সঙ্গে সঙ্গে রোগী মৃত্যুবরণ করে না। তবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যেতে থাকে। এই রোগ হলে আপনি কিছু সমস্যার সম্মখিন হবেন। সেগুলো বেশিরভাগই এই রোগের লক্ষণ এ বলা হয়েছে। তবে আলাদা করে বলে দিতে চাই। এতে এই রোগ সম্পর্কে ধারণা পেতে আপনার সহজ হবে।
প্রথমেই যে বিষয়টি বুঝতে পারবেন সেটি নিজেকে প্রচন্ড দুর্বল মনে হবে এবং কোন কারন ছাড়াই আপনার ওজন কমতে থাকবে। আরো একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে সেটি হচ্ছে আস্তে আস্তে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু হয়। শরীরের যেকোনো ক্ষত সুস্থ হতে অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন হয়। এগুলো মূলত ডায়াবেটিকসের প্রধান এবং প্রাথমিক লেভেলের সমস্যা। অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে গেলে শরীরে আরো অসংখ্য সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলো হতে পারে জ্বর, শরীর ভারী হয়ে যাওয়া, কোন কিছু খেতে না পারা, বমি হওয়া এবং আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে রোগী মারা যাওয়া।
তবে ডায়াবেটিকস হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি যদি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারেন এবং নিয়মিত হাঁটাচলা করেন তাহলে ডায়াবেটিস আপনার খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবেনা।
ডায়াবেটিস পরীক্ষার নিয়ম
বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের পরীক্ষার দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি বেশ পুরনো পদ্ধতি এবং অন্যটি সম্প্রতি প্রচলিত হচ্ছে। ডায়াবেটিকস পরীক্ষার নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি।
ওজিটিটি
ও জি টি টি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। এটিই বাংলাদেশের পুরনো প্রচলিত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে সারারাত না খেয়ে সকালে কোন কিছু খাওয়ার আগেই রক্ত এর স্যাম্পল গ্রহণ করা হয়। এরপর গ্লুকোজ জাতীয় শরবত খাওয়ানোর দুই ঘন্টা পর আবারও রক্তের স্যাম্পল গ্রহণ করা হয়। তারপরে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এটি বেশ পুরনো এবং ঝামেলাপূর্ণ। কারণ এই পদ্ধতিতে রোগীকে ৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে রক্তের স্যাম্পল দিতে হয়। তারপর আবারও দুই ঘণ্টা না খেয়ে ল্যাবে বসে থাকতে হয়। তবে এর অনেক সুবিধা আছে যেগুলো এইচবিএ১সিতে নেই।
এইচবিএ১সি পরীক্ষা
2018 সাল থেকে বাংলাদেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত হয়। এতে রোগীকে ৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয় না। অন্য কোন সমস্যা নেই। এই পদ্ধতিতে রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা হয় এবং গত কয়েক মাসের গড় অবস্থা হিসেব করে রিপোর্ট দেয়া হয়। এটি খুব সহজ এবং দ্রুত। তবে এর বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন গর্ভ অবস্থায় এই টেস্ট করা সম্ভব নয়। এবং অনেক বংশগত রোগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সঠিক ফলাফল দিতে পারেনা।
বাংলাদেশে ডায়বেটিকস এর চিকিৎসা
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এর দুই ধরনের চিকিৎসা প্রচলিত। একটি হচ্ছে ট্যাবলেট এবং অন্যটি হচ্ছে ইনসুলিন। ডায়াবেটিস যদি বেড়ে যায় তাহলে এর যেকোনো একটি রোগীকে নিতে হবে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় 72 শতাংশ রোগী ট্যাবলেট নিয়ে থাকে এবং 12 শতাংশ রোগী ইনসুলিন ব্যবহার করে। এর মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যারা ইনসুলিন এবং ট্যাবলেট দুটি গ্রহণ করে। এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একজন রোগীর প্রতি মাসে চিকিৎসা বাবদ খরচ প্রায় 2000 টাকার কাছাকাছি। তবে যদি ডায়াবেটিকস পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না হয় তাহলে এই খরচ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কারণ ডায়াবেটিসের কারণে অন্য অনেক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয়।
Diabetes কত হলে বিপদ
মানুষের শরীরে 6.5 বা 6.7 এর বেশি গ্লুকোজ থাকলেই সেটিকে ডায়াবেটিস রোগ বলা হয়। তবে কখনো কখনো এই মাত্র 15-17 পর্যন্ত উঠে যায়। আর তখন রোগী বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অন্যান্য অনেক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা কত হলে তা ভয়াবহ হবে এর কোন মাপকাঠি নেই। তবে কিছু রোগীর শরীরে 12 এর কাছাকাছি ডায়াবেটিকস থাকলেই অত্যন্ত দুর্বল অবস্থার মুখোমুখি হয়। আবার কিছু রোগী 15 থেকে 17 পর্যন্ত সহজেই সহ্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কে ডায়াবেটিস রোগের প্রধান চিকিৎসা মনে করা হয়। কারণ একমাত্র এটির মাধ্যমেই ডায়বেটিকস কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেহেতু ডায়াবেটিস রক্তে শর্করা বৃদ্ধি জনিত রোগ সুতরাং আমাদেরকে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে। সেজন্য ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার পরামর্শ বেশি দেওয়া হয়। একজন মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন 30 ক্যালরি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বাদাম, শিমের বিচি, ছোলা, এগুলো খেতে পারবে। এছারাও গম, চিড়া, রুটি, নুডলস, নোনতা বিস্কুট, আলু, গাজর, শালগম, শাক সহ কম চর্বিযুক্ত মাংস মাছ এগুলো খেতে পারবে। খাবারের ক্ষেত্রে অবশ্য পাকা কলা, ভাত, খেজুর, কিশমিশ, আঙুর, আখের রস, চিনি, মধু, গুড়, মিষ্টি, দুধের সর, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি এগুলোকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
তবে খাবার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন যদি আপনি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন অথবা বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন প্রদত্ত বইয়ে খাবারের নির্দেশনা ভালো মতো পড়েন।
এই ছিল ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও করণীয় এবং চিকিৎসা ও খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেল। আশাকরি ডায়াবেটিস নিয়ে আপনার মনের মধ্যে থাকা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করার জন্য ধন্যবাদ।