করোনা টিকা রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে করব
বাংলাদেশে বসবাসরত এবং প্রবাসীদের করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন (Corona Vaccine Registration) এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এই লেখা। বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক করোনা বাংলাদেশের জন্যও বেশ ভয়াবহ। করোনা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা। তবে টিকা নেওয়ার মাধ্যমেও এই রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে।
করোনা টিকা কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনো অনেক প্রশ্ন । কিভাবে করোনা টিকা নিতে হবে, কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং কতদিন পর করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে সেগুলো নিয়েও অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।
আজকে সেই বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করব। তাহলে দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে করব?
“সরকারের যে কোন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে বা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে হলে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়” এই ধরনের একটি ধারনার আমাদের মধ্যে বেশ পুরনো। আর এই বিষয়টি অনেকাংশেই সত্য। তবে করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন এর রেজিস্ট্রেশন এর প্রক্রিয়া কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে সরকারের এই কার্যক্রম। টিকাদান কর্মসূচি কে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার একটি সফটওয়ারের সহযোগিতা নিচ্ছে। এই সফটওয়্যার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই এই তিনটি সরকারি সংস্থা মিলেই করেছে। যার মাধ্যমে আপনি খুবই সহজে টিকাদান কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং টিকাদানের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে করোনার টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন।
প্রথম ধাপ
করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন আমরা দুটি পদ্ধতিতে করতে পারব। একটি হচ্ছে সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এবং অন্যটি হচ্ছে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। যদিও দুটি পদ্ধতি সম্পূর্ণ একই রকম। সেইজন্য কিভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করবেন সেটি দেখাচ্ছি। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে প্রথমে Surokkha এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
দ্বিতীয় ধাপ
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরেই প্রথমে আপনি এই ধরনের একটা ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
সেখান থেকে আপনি “নিবন্ধন করুন” এই অপশনটিতে ক্লিক করলে নতুন আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এই পেজটিতে পাঁচটা ফাঁকা ঘর থাকবে। প্রথমে “নির্বাচন করুন” অংশে আপনি কোন ক্যাটাগরির মানুষ সেটা সিলেক্ট করুন। আপনার জানার জন্য বলে দিচ্ছি এখনো পর্যন্ত অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। তাই আপনি যেই ভিত্তিতে অগ্রাধিকার এর লিস্টে আছেন সেটা সিলেক্ট করুন। তারপর তার পাশে “উপ শ্রেণি নির্বাচন” অংশ থেকে আপনার সঙ্গে সম্পর্কিত অপশনটি সিলেক্ট করুন। নিচে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিন এবং তার পাশে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী আপনার জন্ম তারিখটি বসান। নিচে কয়েকটি বর্ণ দেখতে পাবেন, এগুলোকে সঠিক সিরিয়ালে তার নিচের ফাঁকা ঘরে লিখুন। এরপর যাচাই করুন নামে সবুজ বাটন ক্লিক করবেন।
তৃতীয় ধাপ
এটি এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ধাপ। আগের প্রক্রিয়ার সবুজ বাটনে ক্লিক করার পরে নিচে কয়েকটি অপশন আসবে। এবং যেহেতু আপনি প্রথমবার আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিয়েছেন, তাই এবার আপনার নাম ইংরেজি এবং বাংলায় দুটি অপশনে আসবে। সেখানে আপনাকে কোন কাজ করতে হবে না। আপনি তার নিচে আপনার ফোন নাম্বারটা দেবেন। এরপর আপনাকে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগ গুলো সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করবে। সেই রোগগুলো যদি আপনার থাকে তাহলে “হ্যাঁ” অপশনে ক্লিক করবেন। আর যদি না থাকে তাহলে “না” অপশনে ক্লিক করবেন।
এভাবে প্রত্যেকটি রোগের ক্ষেত্রে অপশন নির্বাচন করতে হবে। তারপরে আপনার পেশা জিজ্ঞেস করবে অর্থাৎ আপনি কোন ভাবে কোভিড এর সেবাদান কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সেটা জানার জন্যই মূলত এটি করা হবে। সেখান থেকে সবকিছু সিলেক্ট করার পর আপনাকে আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে। ঠিকানা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথমে বিভাগ, তারপর জেলা, তারপর উপজেলা, এরপর ইউনিয়ন এবং পরে পাড়া-মহল্লায় গুলো সিলেক্ট করবেন। পাড়া বা মহল্লার ক্ষেত্রে আপনাকে লিখে দিতে হবে এবং অন্য গুলোর ক্ষেত্রে সিলেক্ট করার মত অপশন পাবেন। এরপর আপনি কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে চান সেটি নির্বাচন করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন।
চতুর্থ ধাপ
এই ধাপে আপনার মোবাইল নাম্বারে একটা কোড পাঠানো হবে এবং সেই কোডটি স্ক্রিনে থাকা ফাঁকা ঘরে বসাতে হবে। এই কোড কে বলা হয় ওটিপি। এটি করা হয় কারন আপনি যেই মোবাইল নম্বরটি দিয়েছেন সেটি সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য। কারণ পরবর্তীতে টিকা সম্পর্কিত তথ্য আপনার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে। সেজন্যই আপনি নিজে সবসময় ব্যবহার করেন এমন একটি মোবাইল নম্বরে তৃতীয় ধাপে প্রদান করার চেষ্টা করবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পঞ্চম ধাপ
চতুর্থ ধাপে মূলত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। পঞ্চম ধাপে আপনাকে টিকার কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য চতুর্থ ধাপ কমপ্লিট এরপর আপনি যেই পেজে আছেন সেখান থেকে “কার্ড ডাউনলোড করুন” অপশন এ ক্লিক করে আবার আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং জন্মতারিখ দেওয়ার পর মোবাইলে একটা ওটিপি আসবে। সেটাকে ফাকা ঘরে বসিয়ে আপনি আপনার টিকার কার্ড টি ডাউনলোড করতে পারেন। ডাউনলোড করা পিডিএফ ফাইল সাদা কালো অথবা রঙিন প্রিন্ট করে আপনি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারেন। এটি ছিল মূলত করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া।
প্রবাসীদের করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম Corona
করোনা টেস্ট – বিকাশ ৫০% ডিসকাউন্ট অফার Corona
কারা করোনা টিকা দিতে পারবে না?
করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন কারা নিতে পারবেনা সেটি নির্ভর করে টিকার ধরনের ওপর। কোন কোন টিকা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো অন্য বয়সের মানুষরা নিতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ সরকার করোনা টিকা প্রদানের যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সেখানে কিছু মানুষকে আপাতত টিকা কার্যক্রমের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে তালিকা করা হয়েছে এ তালিকার বাইরের কেউ এখন টিকা নিতে পারবেন না। এছাড়া ও 18 বছরের কম বয়সী কাউকে এখন টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই। এছাড়াও যারা গর্ভবতী মা ও সন্তানকে এখনো দুগ্ধপান করান, গুরুতর অসুস্থ বেক্তি ও টিকা নিতে পারবে না। তবে খুব দ্রুতই সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত কার্যক্রম চলছে সরকারের।
করোনা টিকা কার্যক্রমের আওতায় দেশের প্রায় সকলেই আসবেন খুব দ্রুত সময়ে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এখনো করোনা টিকা পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকার খুব সহজেই টিকা প্রদান শুরু করতে পেরেছে এটা আমাদের জন্য বেশ বড় একটি পাওয়া।
আশাকরি উপরের ধাপগুলো মেনে চলে আপনি নিজেও বাড়িতে বসে 5 মিনিটের মধ্যেই করোনা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং সম্পূর্ণভাবে নিজের টিকা নিতে পারবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।