বিকাশ, নগদ ও উপায় – এজেন্ট হওয়ার নিয়ম
বিকাশ, নগদ ও উপায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের Agent হওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি। ক্যাশের চেয়ে বিকাশ ভালো, অথবা লেনদেন হবে নগদে। স্লোগান যেটাই হোক না কেন মানুষের লেনদেনের নির্ভরতা এখন অনেকটাই মোবাইল ভিত্তিক হয়ে গিয়েছে। আগে পকেটের টাকা নিয়ে বের হতো আর এখন মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর ওয়ালেটে টাকা নিয়ে বের হয়। মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে এজেন্ট ব্যবসার খুব গভীর সম্পর্ক। তাইতো লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই এজেন্ট ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর এজেন্ট হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু Bkash, Nagad ও Upay এর এজেন্ট হওয়ার নিয়ম অনেকেই জানে না। সে বিষয়টা নিয়েই আমরা আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক।
কিভাবে এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হবে
মোবাইল ব্যাংকিং এর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন বিকাশ, নগদ, উপায় এবং রকেট প্রত্যেকটির এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। তাই প্রত্যেকটির একাউন্ট খোলার সিস্টেম আমরা আলাদা ভাবে আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করব।
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার নিয়ম
বিকাশের এজেন্ট হতে হলে আপনাকে প্রথমেই যোগাযোগ করতে হবে আপনার এলাকার বিকাশ মার্কেটিং এজেন্টের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলেই জানতে পারবেন আপনার কি কি কাগজ প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আপনাকে এজেন্ট করার জন্য অন্যান্য বিষয়গুলো তিনি যাচাই করবেন। সেই জন্য সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করাই ভালো তবে আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ বিকাশ অফিসে গিয়েও যোগাযোগ করতে পারবেন। তারা আপনাকে সম্পূর্ণ গাইড লাইন এর ব্যবস্থা করে দেবে।
নগদ এজেন্ট হওয়ার নিয়ম
নগদ এর এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে বিকাশের মতোই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তবে নগদ মার্কেটিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে অফিসে গিয়ে কথা বলাটা কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আপনি যদি নগদ এর এজেন্ট হতে চান তাহলে সরাসরি নগদ সার্ভিস পয়েন্টে গিয়ে যোগাযোগ করুন।
আপনার কাছের সার্ভিস পয়েন্টেের ঠিকানা জানতে, নগদ হেল্পলাইন 16167 নম্বরে কল করতে পারেন। তারা আপনাকে আপনার এলাকার নগদ সার্ভিস পয়েন্ট এর ঠিকানা দিয়ে দেবে। সেখানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। তবে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে সেটা আর্টিকেল এর পরবর্তী অংশে পেয়ে যাবেন। তাই পুরোটা পড়তে থাকুন।
উপায় এজেন্ট হওয়ার নিয়ম
বিকাশ, নগদ এর মতই আপনি খুব সহজে উপায় এর এজেন্ট হতে পারেন। এর জন্য আপনাকে তাদের পলিসির সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবসা করতে হবে। উপায় এর এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনি বিকাশ এবং নগদ এর মতোই তাদের ডিস্ট্রিবিউটার বা মার্কেটিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
মার্কেটিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আপনি আপনার আশেপাশে থাকা যেকোনো উপায়ে এজেন্টের সঙ্গে কথা বলুন। তারাই আপনাকে তার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবে। তারপর মার্কেটিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সকল কিছু জেনে নিন। তিনি আপনাকে বলে দেবে এজেন্ট হতে আপনার কি কি দরকার। আমরা এই পোস্টেও আপনাকে বলে দেব সেই ব্যাপারে অনেক তথ্য।
এজেন্ট হতে কি কি লাগে
যারা বিকাশ, নগদ অথবা উপায়ের মত মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট হতে চান তাদের মনে খুব কমন একটি প্রশ্ন “এজেন্ট হতে কি কি লাগে”। প্রশ্নটা খুবই যুক্তিযুক্ত কারণ আমাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে আমরা কখনই এজেন্ট হতে পারব না। আমরা এখন জানার চেষ্টা করব বিকাশ নগদ ও উপায় এর এজেন্ট হতে কি কি প্রয়োজন।
বিকাশ এজেন্ট হতে কি কি প্রয়োজন
- সম্ভাবনাময় এলাকায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকা
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- টিন আইডি নাম্বার
- আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিকাশ একাউন্ট খোলা এমন 1 মোবাইল নাম্বার
নগদ এজেন্ট হতে যা যা প্রয়োজন
- নিকটস্থ কোনো এজেন্ট না থাকা
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- এজেন্ট হতে আগ্রহী ব্যক্তির ছবি
- ট্রেড লাইসেন্স
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি কাগজপত্র।
- একটা মোবাইল নাম্বার
উপায় এজেন্ট হতে যা যা প্রয়োজন
- নিকটস্থ কোনো এজেন্ট না থাকা
- আগ্রহী ব্যক্তির ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- ব্যবসা বা দোকানে বসা অবস্থায় একটা ছবি
- নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকা
- ট্রেড লাইসেন্স
- একটা মোবাইল নাম্বার
এজেন্ট হওয়ার শর্ত
বিকাশ, নগদ এবং উপায়, যাই বলেন না কেন। এদের ব্যবসার ধরন একই রকম। যাকে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং বলি। যেহেতু তাদের ব্যবসার ধরন একই রকম, তাই এজেন্ট হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য তাদের শর্ত অনেকটা একই রকম। যেগুলো কোম্পানি ভেদে ভিন্ন আকারে উপস্থাপন করা হয়। যেহেতু শর্তগুলো প্রায় একইরকম তাই প্রত্যেকটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা না করে আমরা আপনাদের জন্য একসঙ্গে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকা
প্রধানত আপনার একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সচরাচর যে কোন দোকান হয়ে থাকে। যে কোন দোকানি চাইলেই এই মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এজেন্ট হতে পারে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থান
আপনার দোকানটি এমন জায়গায় হতে হবে যেখানে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। অথবা যেখানে কিছু সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। যেখানে মানুষের বসবাস খুবই কম এবং বাহির থেকে মানুষের যাতায়াত কম হয় সেই অঞ্চলে সচরাচর এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয় না। আর নিয়োগ দিলেও সেখানে খুব কমসংখ্যক এজেন্ট থাকে। তাই আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যে অঞ্চলে, সেখানে যদি কোনো পর্যটনকেন্দ্র, বাস স্ট্যান্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবেন।
নিকটস্থ কোনো এজেন্ট
আপনার নিকটস্থ কোনো এজেন্ট যদি আপনার এজেন্ট হওয়ার জন্য বাধা দিয়ে থাকে তাহলেও আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ সেখানে ইতোমধ্যেই একজন রয়েছে এবং তিনি পুরো মানুষকে সেবা দিতে প্রস্তুত। তাই সেই স্থানে নতুন করে আরেকজন এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা বেশীরভাগ মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর থাকেনা। তবে এখন প্রচার বৃদ্ধির জন্য হয়তো কিছু কোম্পানি একই স্থানে কয়েকজন এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। তবে এটা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আর থাকবেনা। এক বাজারে বা স্থানে একজন বা দুজনের বেশি এজেন্ট তারা রাখবে না।
নগদ টাকা থাকা
এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন মূলধন। লেনদেন করতে অবশ্যই নগদ টাকা থাকা জরুরি। তা না হলে আপনি গ্রাহকদেরকে সেবা দিতে পারবেন না। সেজন্য এটাকে ও শর্ত হিসাবে মনে করা হয়।
এজেন্ট কমিশন
বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এজেন্ট এর জন্য বিভিন্নভাবে কমিশন অফার করে থাকে। যেহেতু আপনি এজেন্ট হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী তাই আপনার কমিশনের ব্যাপারটিও জানা প্রয়োজন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি কত টাকা কমিশন দিচ্ছে এজেন্টদের।
বিকাশ এজেন্ট কমিশন
বিকাশের এজেন্টরা দুই ধরনের কমিশন পেয়ে থাকে। যদি সে অ্যাপ ব্যবহার না করে লেনদেন করে তাহলে তার কমিশন হবে 4 দশমিক 1 শতাংশ প্রতি হাজারে। অর্থাৎ সে যদি 1000 টাকা লেনদেন করে তাহলে 4 টাকা 10 পয়সা পাবে। আর যদি অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করে তাহলে কমিশন ভাবে 4 টাকা 30 পয়সা। তার মোট লেনদেনের 90 শতাংশ বা তার বেশি যদি অ্যাপ ব্যবহার করে করা হয় তাহলে তাকে স্পেশাল কমিশন হিসেবে প্রতি হাজারে 20 পয়সা প্রদান করা হয়।
নগদ এজেন্ট কমিশন
বিকাশ এর মত নগদ এজেন্টের কমিশন নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা নেই। তাদের এই কমিশন রেট একদম ফিক্সড। আর সেটা হচ্ছে প্রতি হাজারে 4 টাকা। যদি 1000 টাকা লেনদেন করে তাহলে কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে চার টাকা কমিশন দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতি এক লাখ টাকা লেনদেন করলে কমিশন দাঁড়াবে 400 টাকা।
উপায় এজেন্ট কমিশন
উপায় এজেন্টের কমিশন সম্পর্কে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের হেল্প সেন্টারে কল করেও তারা এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানাতে পারিনি। তবে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি যদি আপনার এলাকার ইউসিবি ব্যাংকে গিয়া কথা বলেন তাহলে তারা আপনার সহযোগিতা করবে। এছাড়া আপনি নিজে তাদের ইমেইলে মেইল করে তাদের কমিশন ও অন্য বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাদের মেইল এড্রেস হলঃ info@upaybd.com
বন্ধুরা প্রত্যেকটি মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট হতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ইতোমধ্যেই আমরা আপনাদের জন্য উপস্থাপন করেছি। আশা করছি তথ্যগুলোতে আপনি বেশ উপকৃত হবেন এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট ব্যবসায় সফল হবেন। আপনার সফলতা প্রত্যাশা করে আজকে এখানেই শেষ করছি।
আমাদের এজেন্টের খুব দরকার
বিকাশ এজেন্ট লাগবে